পানিহাটি প্রবীণ প্রবীণা সমিতি

Panihati Prabin Prabina Samiti

বিশ্ববন্দিত মহামানবের পদধূলি ধন্য অনন্য মিলনক্ষেত্র

পানিহাটি অঞ্চলে ঐতিহ্যময় সংস্কৃতির এক গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, কিছু বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঐতিহ্যকে একত্রিত করার একটি প্রয়াস হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে।

  • পানিহাটি মহোৎসবতলা

    পানিহাটি আর খড়দহ ভাগীরথীর তীরবর্তী পাশাপাশি দুইটি প্রাচীন গ্রাম। শ্রীচৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ পানিহাটিতে এসে এই বৃক্ষ মূলেই উপবেশন করেছিলেন বলে শোনা যায়। এই বটবৃক্ষটির মূল বেস্টন করে ইঁট দিয়ে বাঁধানো বেদীর উপর স্থাপিত একটি স্মৃতিস্তম্ভের পাথরের ফলকে লেখা থেকে জানা যায় শ্রীচৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দ পানিহাটি এসে এই বৃক্ষ মূলেই বসে ছিলেন। শ্রী রামকৃষ্ণ দেব পানিহাটিতে শ্রী চৈতন্য প্রবর্তিত চিড়া উৎসবে প্রায় প্রতি বৎসর ভক্ত বৃন্দসহ যোগদান করতেন।পানিহাটিকে শ্রী রামকৃষ্ণ মহাতীর্থ মনে করতেন, যা প্রত্যেক খড়দহ থানার অধিবাসী তথা পানিহাটিবাসীর কাছে একটি গৌরব। এই প্রসঙ্গে শ্রী রামকৃষ্ণ কথামৃতে একাদশ অধ্যায়ের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে। ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দে ৯ই ডিসেম্বর রবিবার পঞ্চবটীতে শ্রী রামকৃষ্ণ ও মাষ্টার (মহেন্দ্র গুপ্ত-শ্রীম) এর কথপোকথন, শ্রী রামকৃষ্ণর এই ভাব প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি দক্ষিণেশ্বর পানিহাটি (পেনেটি)র মত মহাতীর্থ হওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ পেয়েছে।মহাত্মা গান্ধী শ্রী চৈতন্যের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য মহোৎসবতলায় পরিদর্শনে আসেন ১৯৪৬ সালের ১৮ই জানুয়ারী। এই পরিদর্শনকে তিনি তীর্থ যাত্রা হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন। বিশ্ব বন্দিত এই মহাপুরুষগণের মিলনক্ষেত্র হিসাবে পানিহাটি মহোৎসবতলা আজও এক অনন্য ঐতিহ্যের স্বাক্ষী বহন করছে।
  • গান্ধীজির দ্বিতীয় আবাসস্থল – খাদি প্রতিষ্ঠান সোদপুর

    ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাসে সোদপুর খাদি প্রতিষ্ঠানের অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য যার সঙ্গে অবশ্যই মহাত্মা গান্ধীর অহিংস সত্যাগ্রহ, খাদি ও কুটীর শিল্পের উদ্যোগের বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে। গান্ধীজির সঙ্গে সোদপুর খাদি প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক ছিল নীবিড় এবং তিনি বলতেন “সোদপুর আমার দ্বিতীয় আবাসস্থল”। বস্তুত অবিভক্ত বাংলা ও পূর্ব ভারতের সঙ্গে গান্ধীজির যোগসুত্র ছিল এই খাদি প্রতিষ্ঠান। খাদি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও বিভিন্ন কেন্দ্র অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে পূর্ববঙ্গে, বিহার, উড়িষ্যা ও আসামে বিস্তৃত ছিল।
    ২রা জানুয়ারী ১৯২৭ সালে মহাত্মা গান্ধী সোদপুর রেল ষ্টেশনের পশ্চিম দিকে ১৭ বিঘা জমির উপর খাদি প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধন করেন, এই স্থানটি বর্তমানে সোদপুর গভার্ণমেন্ট কোয়ার্টারের মধ্যে অবস্থিত। গান্ধীবাদী বিখ্যাত রসায়নবিদ ও বিজ্ঞানী সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত এই এলাকাটি নিজ উদ্যোগে গ্রহণ করে খাদি প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন এবং ১৯২৪ সালে সোদপুর আশ্রমের কাজ শুরু হয়। সতীশচন্দ্র দাশগুপ্ত, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল কেমিকেল কোম্পানিতে মুখ্য রসায়নবিদ হিসাবে কর্মরত অবস্থায় প্রভুত খ্যাতি অর্জন ও উপার্জনও করেছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর স্বাবলম্বন ও স্বদেশী চিন্তা ধারায় প্রভাবিত হয়ে সমস্ত ছেড়ে এই প্রতিষ্ঠানটি গঠন করেন। এই আশ্রমের বিভিন্ন খাদি দ্রব্যাদি ও স্বদেশী জিনিসের উৎপাদন ভারতবর্ষের খাদি ইতিহাসের স্মরণীয় অধ্যায়। এই মহান ব্যক্তির আত্মত্যাগ ও সাধনা এখন বিস্মৃতির কবলে চলে গেছে।
    এখানে দেশীয় উপাদান ও পদ্ধতিতে খাদির জিনিস তৈরির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় যেটি মহাত্মা গান্ধীর দ্বারা উচ্চ প্রশংসিত হয়েছিল। ২রা জানুয়ারী ১৯২৭ থেকে ১৯৪৭ সালে ১৩ই আগস্ট পর্যন্ত, তিনি বিভিন্ন সময় এই প্রতিষ্ঠানে এসেছেন এবং ৫ – ৭ সপ্তাহ পর্যন্ত থেকেছেন এবং উল্লেখযোগ্য কর্মসুচীতে অংশগ্রহন করেছেন।
    মহাত্মা গান্ধীর এই প্রতিষ্ঠানে থাকা কালীন অনেক গুরুত্বপূর্ণ সভা ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হতো দেশের বহু নেতৃবৃন্দের সঙ্গে, তাদের মধ্যে উল্লেযোগ্য- সুভাষচন্দ্র বসু, শরৎ বসু ও মতিলাল নেহেরু, জহরলাল নেহেরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদ মুখ্যার্জি, সরোজিনী নাইডু, বাদশা খান, ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ, ডঃ বিধানচন্দ্র রায়, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ডঃ প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ প্রমুখ।
    গান্ধীজির অহিংস সংগ্রামের একটি স্মরণীয় স্থান হিসাবে ২০১৪ সালে UNESCO হেরিটেজ প্রাথমিক তালিকা ভুক্ত করে সন্মানিত করা হয়েছে যার জন্য আমরা সকলে এই অঞ্চলের অধিবাসি হিসাবেই শুধু গর্বিত নয় সারা বাংলা তথা ভারতের কাছেও এটি একটি গর্বের বিষয়।
  • ছাতুবাবু ও লাটুবাবুদের বাগানবাড়ী (গোবিন্দ হোম)

    রবীন্দ্রনাথের 'জীবনস্মৃতি' ও 'ছেলেবেলা' যাঁরা পড়েছেন তাদের কাছে পরিচিত পেনেটির বাগানবাড়ী আসলে ছাতুবাবু ও লাটুবাবুদের বাগানবাড়ী গঙ্গার তীরবর্তী অতি মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে উদ্ভাসিত যা এখন গোবিন্দ কুমার হোম নামে পরিচিত। এখানে দুইতলা বাড়ী ও বিরাট বাগান রয়েছে। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন এই বাড়িটিকে হেরিটেজ সাইট হিসাবে ঘোষনা করেছেন। কবি এই বাড়িতে তিনবার এসেছিলেন। এই বাগানে একসময় স্বামী বিবেকানন্দ পরিদর্শনে এসেছিলেন। এক সময় গোবিন্দ হোম বাগানটি বেলুড় মঠ স্থাপনের কথা হয়েছিল। ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে স্বামী বিবেকানন্দ ঐ বাগানটি পরিদর্শনে এসেছিলেন নৌকা করে কয়েকজন শিষ্যদের সাথে। গোবিন্দ হোম উদ্যানটি বেশি পরিচিত রবীন্দ্রনাথের সাথে কিন্তু বিবেকানন্দের পদধূলিও এই উদ্যানে ঐতিহাসিক পরিচয় বহন করে বিশেষত বেলুড় মঠ স্থাপনের পরিকল্পনায় গণ্য হওয়ার জন্য।
  • শ্রীরাঘব ভবন

    শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে উল্লেখ আছে শ্রীচৈতন্যের সদা অধিষ্ঠান
    “শচীর মন্দিরে, আর নিত্যানন্দ নর্তনে, শ্রীবাস অঙ্গনে আর রাঘব ভবনে, এই চারিঠাঁই প্রভুর সদা আবির্ভাব।"
    শ্রীচৈতন্যের অন্তরঙ্গ পার্ষদ রাঘব পন্ডিতের ‘শ্রীপাট’ এবং মাধবীলতা কুঞ্জে আছে রাঘব পন্ডিতের সমাধি। ওনারই প্রতিষ্ঠিত মদনমোহন এবং রাধারমণ মূর্তির নিত্য পূজা হয়। কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্য চরিতামৃতে চার ঠাঁই এর উল্লেখ আছে, যার একটি ঠাঁই শ্রীরাঘব ভবন। রাঘব ভবনে এসেছিলেন শ্রী চৈতন্য ও নিত্যানন্দ মহাপ্রভু। রাঘব ভবন থেকে পুরিতে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্য পাঠানো হত নানা প্রকার আহার সামগ্রী যা রাঘবের ঝালী হিসাবে বিখ্যাত। শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব একাধিকবার এই রাঘব ভবনে চিরা উৎসব উপলক্ষে যোগদান করেন। রাঘব ভবন গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারে বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সোদপুর স্টেশনের পশ্চিম দিকে স্টেশন রোড ধরে মীনা সিনেমা (পিয়ারলেস) বাসস্টপেজ পার হয়ে পশ্চিমমুখী রাস্তা ধরে রাঘব পন্ডিতের ভবনে আসা যায়।
  • মনি সেনের ঠাকুরবাড়ি, পানিহাটি

    এই প্রসঙ্গে ‘শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গ’ (স্বামী সারদানন্দ) প্রথম ভাগ পৃষ্ঠা ৯০’ – তে লেখা আছে – “১২৬৫ সালে (ইংরাজী ১৮৫৮) পানিহাটির মহোৎসবে গমন করিবার কথা উল্লেখ করিতেছি উৎসবানন্দ গোস্বামীর পুত্র বৈষ্ণবচরণ ঐ দিন ঠাকুরকে প্রথম দেখেন। ঠাকুর শ্রীযুক্ত মণিমোহন সেনের বৈঠকখানায় বসিয়া আছেন। এমন সময় বৈষ্ণবচরণ তথায় উপস্থিত হন। বৈষ্ণবচরণ ঠাকুরকে দেখিয়াই আধ্যাত্মিক উচ্চাবস্থা সম্পন্ন অদ্বিতীয় মহাপুরুষ বলিয়া স্থির নিশ্চয় করেন। সেদিন অধিকাংশ সময় তাহার সাথে সময় অতিবাহিত করেন এবং নিজ ব্যয়ে চিড়া, মুড়কি, আম ক্রয় করিয়া মালসা ভোগের বন্দোবস্ত করেন। এটিই পানিহাটিতে ঠাকুরের প্রথম আবির্ভাব। শ্রী রামকৃষ্ণ দেহাবসান হয় ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে। শেষবার পানিহাটিতে আসেন ১৮৮৫ সালে”। ১৮৮৫ সালের জৈষ্ঠ্য মাসের শুক্লা ত্রয়োদশীতে চিড়া উৎসবে শ্রী রামকৃষ্ণের আগমন সম্বন্ধে ‘শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গ’-এ বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে। এইদিন প্রায় ২৫ জন ভক্তসহযোগে শ্রী রামকৃষ্ণ পানিহাটিতে মনি সেনের বাড়িতে শেষবারের মত পদার্পণ করেন। “নৌকা হইতে নামিয়া ঠাকুর ভক্তসঙ্গে বরাবর শ্রীযুক্ত মণি সেনের বাটীতে যাইয়া উঠিলেন। তাঁহার আগমনে আনন্দিত হইয়া মণিবাবুর বাটীর সকলে তাঁহাকে প্রণামপুরঃসর বৈঠকখানায় লইয়া যাইয়া বসাইলেন। বৈঠকখানা-গৃহের পার্শ্বেই ঠাকুরবাটী। পার্শ্বের দরজা দিয়া আমরা একেবারে মন্দিরসংলগ্ন নাটমন্দিরে উপস্থিত হইয়া যুগলবিগ্রহমূর্তির দর্শন লাভ করিলাম। মূর্তি দুইটি সুন্দর। কিছুক্ষণ দর্শনান্তে ঠাকুর অর্ধবাহ্য অবস্থায় প্রণাম করিতে লাগিলেন।
  • ত্রাণনাথ মন্দির, পানিহাটি

    পানিহাটির পৌরপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন পৌরপ্রধান ত্রাণনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় গঙ্গার তীরে এক সুন্দর ও ঐতিহ্যপূর্ণ মন্দির নির্মাণ করে তাদের পারিবারিক কালীমূর্তি স্থাপন করেন। এই মন্দির সংলগ্ন অংশে মায়ের মন্দিরের গোলাপ বাগানের পাশে এক ঘাটও তিনি তৈরী করান। এই ঘাট বেশ চওড়া। কথিত আছে দাক্ষিণাত্যের মাধব বিদ্যারত্ন প্রণীত এক হস্তলিখিত পুঁথি দেখে হারান চন্দ্র স্মৃতিরত্ন এই ঘাট উদ্বোধন করেন।
  • সুখচর বারো মন্দির ঘাট

    সুখচরের দক্ষিণপ্রান্তে পানিহাটি অঞলের ভবানীপুরের হরিশচন্দ্র দত্ত ঘাটের পাশে ১২১৩ বঙ্গাব্দে নির্মিত এই বারোটি শিবমন্দির বাঙ্গালী ইঞ্জিনিয়ার নীলমনি মিত্র এবং স্যার বাডফোর্ড লেসলির পরিকল্পনানুসারে নির্মিত হয়। প্রতিটি মন্দিরেই নীলকন্ঠী কষ্টিপাথরের লিঙ্গ আছে।
  • শ্রী গৌরাঙ্গ ও শ্রী নিত্যানন্দের প্রাচীন দারু-বিগ্রহ

    গোবিন্দ দত্ত - মহেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দেবালয়ে সুখচরের গর্ব ও ঐতিহাসিক নিদর্শন এই বিগ্রহ। মহাপ্রভুর কীর্তনীয়া ছিলেন গোবিন্দ দত্ত। ৫০০ বছর পূর্বের ইতিহাস। পুরীতে রথযাত্রায় তিনি কীর্তনের মূলসঙ্গী ছিলেন। ইনি পদকর্তাও ছিলেন এবং পাখোয়াজ/খোল বাজাতেন। সুখচর গ্রামে শ্রীগৌরাঙ্গ ও শ্রীনিত্যানন্দের জীবদ্দশায় তাঁদের দারু প্রতিমূর্তি নির্মাণ করে গোবিন্দ দত্ত সেই দুটি মূর্তি সুখচরে প্রতিষ্ঠা করে পূজা করতেন। এখন ঐ দারু বিগ্রহদ্বয় মিলন সংঘ মাঠের দক্ষিন-প্রান্তে মহেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দেবালয়ে পূজিত হচ্ছেন। গোবিন্দ দত্ত অবশ্য শেষ জীবনে বৃন্দাবনে বাস করতেন। বর্তমানে কীর্তনের পুণরায় জাগরনের সময় গোবিন্দ দত্তের অবদান বিশেষ উল্লেখ রাখে। আর উল্লেখযোগ্য বিষয় বর্তমান যুগের বিখ্যাত সাধক ও সঙ্গীতকার ভবাপাগলারও স্মৃতি এই ঠাকুর বাড়ির সঙ্গে জড়িত রয়েছে।মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যের প্রধান কীর্তনিয়া গোবিন্দ দত্তের উল্লেখ বিশেষ করে শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রম্থে পাওয়া যায়।
  • কৈবল্য মঠ

    ত্রাণ নাথ কালী বাড়ী থেকে পূর্ব মুখে হাঁটাপথে নিত্যগোপাল রোডের অবস্থান। কলকাতার মহানির্বাণ মঠের প্রতিষ্ঠাতা অবধূত-ঞ্জানানন্দ স্বামী পানিহাটিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর জন্মভিটায় নির্মিত হয়েছে কৈবল্য মঠ। আশ্রমিক পরিবেশে মূল মন্দির সহ মঠটি অবশ্যই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
  • সিদ্ধেশ্বরী মাতা কালী মন্দির, সুখচর

    ‘সুখচর কালীতলা’ প্রসিদ্ধ স্থান। স্থানটি খুবই প্রাচীন । সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতার ডানদিকে যে-ঘরে শিবলিঙ্গ পূজিত হচ্ছেন ‘তুঁতেশ্বর শিব’ নামে, সেই প্রাচীন দেউলেরই একটি অংশ বিশেষ। নতুন মন্দিরটি তৈরি হয় অনেক পরে। গ্রামে আজও চড়ক পূজার সমারোহ ঘটে যা প্রাচীন সেই যুগের কথাই সমর্থন করে। পূর্বে জায়গাটি তুঁতগাছের জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। রাজা রাধাকান্ত দেব বাহাদুর জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপনের চেষ্টা করেন। ওই সময় শিব লিঙ্গটি পাওয়া যায়। তাই ‘তুঁতেশ্বর শিব’ নামে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ও সিদ্ধেশ্বরী দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। পরে স্থানীয় গোবিন্দচন্দ্র গঙ্গোপাধ্যায়ের কোন এক পূর্বপুরুষ শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করান। শিলালিপিতে জানা যায় ১৯০১ সালে হেমাঙ্গনী দেবী এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন। মূর্তিটি নবরূপে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেন ভক্ত গোপালচন্দ্র দে ও তার পত্মী বিনোদিনী দাসী ১৯১৭ খৃষ্টাব্দে। মন্দিরের ভিতরে কষ্টিপাথরের কালীমূর্তি ও পদতলে রয়েছেন মহাদেব। সুখচর গ্রামের প্রানকেন্দ্রে এই মন্দিরের অবস্থান।
  • সুখচর বাজারপাড়া ঘাট

    ইংরেজ রাজত্ব কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ভাগীরথীর উভয় তীরবর্তী গ্রামগুলি ধীরে ধীরে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে বেশী মাত্রায়। ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী জমিদারী ব্যবস্থা প্রবর্তনের পর সুখচর শোভাবাজারের রাজ পরিবারের জমিদারীতে পরিগণিত হয়েছিল। এই পরিবারের রাজা নবকৃষ্ণ দেববাহাদুর ও পরবর্তী বংশধর রাজা রাধাকান্ত দেববাহাদুরের উল্লেখ বাংলার ইতিহাসে দেখা যায়। গুড় থেকে চিনি উৎপাদনের ব্যস্তসমস্ত কেন্দ্র তখন সুখচর। কলের সাদা চিনি আবিষ্কার হয়নি তখনও। কাশীর বিশ্বেশ্বরের নিত্য পুজো থেকে বাণিজ্যিক ভাবে বাটাভিয়া (ইন্দোনেশিয়া) পর্যন্ত সুখচরের লালচিনির কদর। গঙ্গা তীরের এই ব্যবসা তখন গমগম করছে। বাণিজ্যকেন্দ্রের পাশে নদীর তীর ঘেষে মস্ত অট্টালিকা নির্মাণ করেন রাধাকান্ত। সুড়ঙ্গ দিয়ে গঙ্গাজল প্রবেশ করানো হত। পরিবারের লোকজনের স্নানের ব্যবস্থার আড়াল ছিল এ ভাবেই। জমিদার পরিবারের প্রতি সম্মান জানাতে, তারই তালুকদার, সোদপুরবাসী ঈশ্বরচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়ের বাড়ির পাশে একটি ঘাট নির্মাণ করান। চাঁদনি – সহ এই ঘাটটি চলতি নাম ‘বাজারপাড়ার ঘাট। চাঁদনির গায়ে পঙ্খের নানা কারুকার্য ছিল। তখনকার পূর্ববঙ্গ থেকে গুড়, ধান ও চিতলমাছ বহন করার প্রচুর নৌকা ভিড়ত এখানে, এই ঘাট থেকেই রাধাকান্ত দেব বাহাদুর ১৮৬৩ সালে বৃন্দাবন রওনা দেন এবং ওখানেই তার দেহান্ত হয়।
  • গিরিবালা ঠাকুরবাড়ি

    রানী রাসমনির ছোট নাতবৌ গিরিবালা দাসী পানিহাটিতে দক্ষিনেশ্বর মন্দিরের অনুকরণে একটি রাধামাধব মন্দির বানিয়েছিলেন বাংলা ১৩১৮ সালে। এখানে রয়েছে রাধাগোবিন্দ মন্দির, বাঁধানো প্রাঙ্গণ থেকে মন্দিরের মেঝে প্রায় ৭ ফুট উঁচু, মন্দিরের গায়ে রঙ্গীন কাঁচের কারুকার্য। মন্দিরের মেঝে থেকে নামার সিঁড়ির দুপাশে দুটি পাথরের নারীমূর্তি হাতে রঙ্গীন কাঁচের বাতিদান, দক্ষিণে ৫০ ফুট লম্বা ও ৪০ ফুট চওড়া শ্বেতপাথরের বাঁধানো নাট মন্দির। গঙ্গার তীরে ছয়টি শিবমন্দির কামেশ্বর, রামেশ্বর, গোপেশ্বর, তারকেশ্বর, ভুবনেশ্বর ও গিরিশ্বর। সঙ্গেই রয়েছে বিশাল ঘাট। প্রতিটি শিবমন্দিরের গায়ে রাধাকৃষ্ণের বিভিন্ন লীলার ছবি আঁকা রয়েছে। কামেশ্বর মন্দিরে যুগল মিলন, রামেশ্বর মন্দিরে মথুরানাথ, গোপেশ্বর মন্দিরে গোষ্টলীলা, তারকেশ্বর মন্দিরে অনন্তশয়ান, ভুবনেশ্বর মন্দিরে রাইমিলন ও গিরিশ্বর মন্দিরে কালিয়াদমনের চিত্র আঁকা।
  • আনন্দময়ী আশ্রম, আগরপাড়া

    এই মন্দিরটি আগরপাড়ার দক্ষিণপ্রান্তে গঙ্গার তীরে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। স্থাপিত ১৩৬৭ সনের ৬ই আশ্বিন। মূল প্রবেশদ্বারের সামনে শ্বেতপাথরের নাট মন্দির। তার উত্তরে রয়েছে মূল মাতৃমন্দির, মন্দিরের গর্ভগৃহে শ্বেতপাথরের বেদীর ওপর প্রতিষ্ঠিত আনন্দময়ী মাতৃমূর্তি। পশ্চিমে রয়েছে ‘মা-এর-মা’ (দিদিমার) শ্রী শ্রী ১০৮ স্বামী মুক্তানন্দ গিরি জী মহারাজের শ্বেত পাথরের বিগ্রহ, তার ডানদিকের যোগেশ চন্দ্র স্মৃতি মন্দিরে আছে ভোলানাথ, যোগেশ্বর, নির্মলেশ্বর রূপী তিন শিবলিঙ্গ, তারও ডানদিকের ঘরে আছে অষ্টধাতুর তৈরি রাধাগোবিন্দ, গৌর-নিতাই, লক্ষ্মী-নারায়ণ, গনেশ, গরুড়, হনুমান-এর বিগ্রহাদি। এসব বিগ্রহ প্রতিদিনই পূজিত হয় নৈষ্ঠিক আচারে। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষই তাঁর (আনন্দময়ীমার) স্নেহের পাত্র ছিলেন। তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন দেশের অতি সাধারণ নগণ্য গ্রামবাসী থেকে শুরু করে প্রয়াত জহরলাল নেহেরু, ইন্দিরাগান্ধী, ত্রিগুণা সেন, ত্রিপুরারি চক্রবর্ত্তী, ডঃ যতীন্দ্র বিমল চৌধুরী, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য্য, ছবি বিশ্বাস প্রমুখ।
  • খড়দহের সুখচর মৌজায় প্রাচীন বৌদ্ধমূর্তি

    খড়দহের দক্ষিণ – পশ্চিম কুলীন পাড়ায় (পূর্বে সুখচর গ্রামের অন্তর্গত ছিল) কয়েক বছর আগে মাটির তলায় একটি বিশাল কালো পাথরের ১০টন ওজনের ৫ফুট ৫ইঞ্চি চওড়া এবং ৯ইঞ্চি মোটা (পুরু) খিলান পাওয়া গেছে। এই পাথরের গায়ে খোদাই করা রয়েছে একটি বৌদ্ধমূর্তি – ৬ইঞ্চি লম্বা এবং ৪ ইঞ্চি চওড়া। পাথরসহ বৌদ্ধমূর্তিটি পাওয়া গেছে স্বামী মহাদেবানন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চত্বর থেকে। বর্তমানে খড়দহ পুরসভার সংগ্রহশালায় বৌদ্ধমূর্তিটি সংরক্ষিত আছে যা এই অঞ্চলের একটি প্রাচীন উন্নত সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে।
  • সুখচরের টেরাকোটা শিবমন্দির

    সুখচর মৌজায় গ্রামের উত্তর প্রান্তে সাপুড়িতলা বা দেউলপোতায় সুখচরের প্রাচীনতম টেরকোটার তিনটি শিবমন্দির প্রায় ধ্বংসের মুখে। এই মন্দির তিনটির বাঙলার আটচালা ধাঁচের ও এর টেরাকোটার অপূর্ব কাজগুলিও বর্তমানে কিছু অবশিষ্ট রয়েছে। প্রত্যেকটি মন্দিরের বহির্ভাগে অপূর্ব টেরাকোটা কারুকার্য এবং জটিল নকশায় পরিপূর্ন কিন্তু এর অধিকাংশই আজ ধ্বংসের পথে। এই মন্দির তিনটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয় প্রায় তিনশত বৎসর পূর্বে ১৭৩১ খৃঃ। নির্মাণ কর্তা ছিলেন রামকৃষ্ণ শেঠ। সুখচরের সম্ভ্রান্ত শেঠ-পরিবারের পূর্ব পুরুষ। এই প্রসঙ্গে আঞ্চলিক ইতিহাসের বিশিষ্ট গবেষক খড়দহের শ্রী তাপস মুখোপাধ্যায়ের গবেষণা এবং উদ্যোগ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। মন্দিরের ভিতরের শিবলিঙ্গগুলিরও এখন কোন অস্তিত্ব নেই। ভালভাবে লক্ষ্য করলে টেরাকোটার তৈরি ড্রাগন, ময়ূর, সাপ, মানুষ সিংহের লড়াই ইত্যাদি দৃষ্টিগোচর হয় কিন্তু এই মন্দির তিনটি এক ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে এই অঞ্চলের প্রাচীন সম্পদশালী ঐতিহ্যের প্রতীক হিসাবে। প্রয়াত কিংবদন্তি ফরাসি পরিচালক জেন রেনওয়্যার-এর পৃথিবী বিখ্যাত এবং ভারতবর্ষের প্রথম রঙ্গিন চলচ্চিত্র ‘দা রিভার (The River, by Jean Renoir)’–এ এই টেরাকোটা মন্দির তিনটির একটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ পাওয়া যায়। এই রিভার চলচ্চিত্রটি ১৯৫১ সালে প্রথম প্রদর্শিত হয়। এই চলচ্চিত্রের সঙ্গে সহকারী হিসাবে আর এক কিংবদন্তি পরিচালক প্রয়াত সত্যজিত রায়ের আত্মপ্রকাশ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
  • অর্দ্ধনারীশ্বর মূর্তি

    পঞ্চানন তলায় কয়েকবছর আগে বহুতল নির্মাণ কালে খনন কার্য করার সময় এক অপূর্ব কালো প্রস্তর খন্ডের অর্দ্ধনারীশ্বর মূর্তির সন্ধান পাওয়া যায়। এটি ‘সেন বংশ’ আমলের নিদর্শন হিসাবে অনেকেরই অনুমান। আরো কয়েক বছর আগে অর্দ্ধনারীশ্বর মূর্তিটির কাছাকাছি অঞ্চলেই প্রাপ্ত বৌদ্ধ মূর্তি সহ বিশাল প্রস্তর খিলান এবং প্রাচীন টেরাকোটা শিবমন্দির তিনটি প্রমান করে খড়দহ সুখচর ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে উন্নত জীবন ধারা ও ধর্মীয় সংস্কৃতির ব্যাপক প্রচলন ছিল। আনুমানিক ৬০০ বৎসর পূর্বে প্রথমে বৌদ্ধ সংস্কৃতি, পরবর্তীকালে সেন বংশ আমলে অর্দ্ধনারীশ্বর মূর্তি ও তারও পরে শৈব সংস্কৃতির পরম্পরার ধারা লক্ষ্য করা যায়।
  • জি.টি.এস. মিনার (সুখচর গীর্জা)

    বি টি রোডে সুখচর গীর্জা স্টপেজ বাসযাত্রীদের কাছে অতি পরিচিত। ৭৫ ফুট উচুঁ ইটে গড়া এই মিনারটি ১৮৩১ সালে বিশাল ত্রিকোনোমিতি কার্য সম্পন্ন করা জন্য নির্মিত হয়। ত্রিকোনোমিতিক জরিপের অধীক্ষক এবং ভৌগোলিক ও রাজস্ব জরিপের সার্ভেয়ার জেনারেল জর্জ এভারেষ্ট ত্রিকোনোমিতিক জরিপ কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এর মতনই আর একটি মিনার রয়েছে দমদম চিড়িয়া মোড়ে।
  • ক্রেগ স্ট্রীট কারবালা,আগরপাড়া

    এখানে ঈদ ও বক্রী ঈদের নামাজ পড়ার জন্য ঈদগা ও মহরমের জন্য কারবালা প্রতিষ্ঠিত আছে। এখানে প্রতিদিন বহু মানুষ প্রার্থনা করার জন্য সমবেত হয়। ঈদ ও অন্যান্য উৎসবে প্রায় ২০০০ মানুষ অংশগ্রহন করেন।
#

পানিহাটি প্রবীণ প্রবীণা সমিতি

২, ডি . বি . নগর, সোদপুর, কলকাতা - ৭০০১১০

Designed by © DRS Tech    Mail: drstech07@gmail.com